শরীরে রক্ত বাড়ায় যেসব খাবার
প্রিয় পাঠক আপনাদের জানা দরকার যে কোন খাবারগুলো খেলে শরীরে রক্ত বাড়ে কারণ শরীরের জন্য রক্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ| রক্ত না থাকলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি হয়| এজন্য যেসব খাবার খেলে রক্ত বাড়ে সে ধরনের খাবার গুলো খেতে হবে|
শরীরে রক্ত কম হওয়ার লক্ষণ, কিভাবে আপনারা শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করবেন এজন্য কি কি খাবেন সেগুলো জেনে রাখুন।
ভূমিকা
রক্ত শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রক্ত শরীর গঠন করতে সাহায্য করে| শরীরে রক্ত না থাকলে কোন কাজ করলে সহজে ক্লান্তি চলে আসে হাত বা ঠান্ডা হয়ে যায়, চোখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়| এই সমস্যা সমাধানের জন্য কি কি খাবেন প্রতিদিন এগুলো আপনাদের জেনে রাখা দরকার| যেন শরীরে রক্ত সমস্যা দেখা না দেয়|
শরীরে রক্ত কম হওয়ার লক্ষণ
শরীরে রক্ত কমে গেলে কি কি লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো জানা প্রয়োজন। আসলে তাহলে জেনে নিন রক্ত কমে গেলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়?
- চোখের রং ফ্যাকাসে হয়ে যায়
- ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যায়
- চুল পড়ে যেতে পারে
- অল্পতেই ক্লান্তি ও বিষণ্ণতায় ভোগে
- অনেক সময় হাত পা ঠান্ডা হয়ে থাকে
- শ্বাসকষ্ট বা নিঃশ্বাসের সমস্যা
- মেজাজ খারাপ
- অনেক ক্ষেত্রে ওজনা বেড়ে যায়
শরীরের রক্ত বাড়ায় যেসব খাবার
শরীর গঠনের প্রধান উপাদান হচ্ছে রক্ত| কিন্তু প্রতিদিন সঠিক খাবার না খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে এই রক্তের মাত্রা কম থাকে| বিশেষ করে মেয়েদের এই সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়| শুধুমাত্র মেয়েদের ক্ষেত্রে না পুষ্টিকর খাবার না খেলে সবার ক্ষেত্রে কেন থাকে এই রক্তের সমস্যা দেখা দিতে পারে|
আমাদের শরীরের রক্তের পরিমাণ কমে গেলে এবং রক্ত প্রবাহ ঠিকভাবে না হলে অনেক সমস্যা দেখা দেয়| যেমন মাথা ধরা, বুক ধরফর করা , শরীর দুর্বল লাগা এই সমস্যা আরও বেশি দিন স্থায়ী হলে আরো জটিল সমস্যা দে পারে| তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক খাদ্য তালিকায় কি কি রাখলে শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
ডালিম বা বেদনা
বেদানাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা আপনার শরীরে রক্ত কোষ বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া।
বেদানাতে যেসব ভিটামিন রয়েছে তা আপনার শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। আপনার শরীরকে রক্ত সংক্রান্ত রোগ থেকে রক্ষা করবে। এতে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং নাইট্রেট থাকে। এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং রক্ত বৃদ্ধি করে।
কুলেখারা
কুলেখারা এর পাতায় থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন সি ও ফলেট। আইরনকে শরীরে এডজাস্ট করতে সাহায্য করে ভিটামিন সি আর এই দুই জিনিসই কুলেখারাতে থাকে। এটি খাবার পদ্ধতি হলো প্রতিদিন একবার করে এর পাতা ভালো করে বেটে এর রসটি খেতে হবে। যার ফলের শরীরে আয়রনের বৃদ্ধি পাবে।
মাংস
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুত বাড়াতে পর্যাপ্ত প্রয়োজন প্রাণিজ প্রোটিন। সকল ধরনের লাল মাংস যেমন গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং কলিজা যা আয়রন বৃদ্ধি করতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। আয়রন হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য জরুরী। মুরগির মাংস লাল মাংস না হলেও দেহে প্রচুর পরিমাণে আয়রন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনযেসব খাবার খেলে ওজন কমে
সামুদ্রিক মাছ
সামগ্রিক খাদ্যে আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ পুষ্টি উপাদান আছে। সুতরাং অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা রোগীদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সামগ্রিক খাদ্য রাখতে হবে।
সয়াবিন
সয়াবিন ছোলা এগুলো খাদ্যে প্রচুর পরিমাণ আয়রন ও ভিটামিন রয়েছে। এজন্য আপনি সয়াবিজ বা সয়ানাগেজ খেতে পারেন। সয়াবিনের সাথে থাকা সাইট্রিক এসিড রক্তস্বল্পতার সাথে লড়াই করে। সয়াবিনে রয়েছে কম পরিমাণ চর্বি ও অধিক পরিমাণ প্রোটিন। এই খাবার যদি আপনি খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে রক্তশূন্যতা দূর হবে।
সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন সয়াবিন বা সয়ানাগেজ রান্না করে খেতে পারেন ।তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যাদের থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন তারা কখনোই সয়াবিন খাবেন না।
মধু
মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এছাড়াও রয়েছে কপার ও ম্যাঙ্গানিজ। এ উপাদান গুলো শরীরে হিমোগ্লোবিন প্রস্তুত করতে সাহায্য করে। তাই রক্তশূন্যতা দূর করতে প্রতিদিন এক চামচ খাটি মধুর সাথে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে যাদের ডায়াবেটিকস রয়েছে তারা যদি এক চামচ মধু খাই তাহলে তাদের একবেলা রুটি অথবা ভাত দিতে হবে।
ডিম
ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। রক্তস্বল্পতা কমিয়ে শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে ডিম খুব ভালো কাজ করে। ডিমের কুসুমে রয়েছে আইরন এটি শরীরে লোহিত রক্তের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। রোগ থাক বা না থাক প্রতিদিন একটি করে সিদ্ধ ডিম খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
ডাল
রক্তস্বল্পতা দূর করতে প্রতিদিন মুগ, মসুর বা মাসকালাইয়ের ডাল খেতে পারেন। কারণ এই ডালগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট। ফোলেট রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক করে। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই ডাল থাকা খুব জরুরী।
পালং শাক
পালং শাকের মধ্য আয়রন, ভিটামিন সি ও ফলেট থাকে। যার ফলে শরীরে আরবিছি ও হিমোগ্লোবিনি বেড়ে যায়। এটি আপনি রান্না করে বা সালাদ হিসেবে খেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন কোন সবজি রান্না করলে তার মধ্যেও থাকা ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যেতে পারে এজন্য রান্না করার পর লেবুর রস মিশিয়ে দেবেন। এর জন্য খাবারে আবার ভিটামিন সি ফিরে আসবে এবং এবং রক্ত বৃদ্ধি পাবে।
খেজুর
খেজুর কে বলতে পারেন পুষ্টিগুণের গুপ্তধন। এতে কপার , ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি ৬, ম্যাগনেগ, প্যারাথনিক এসিড ও আইরন উপস্থিত আছে। আপনি যদি প্রতিদিন খেজুর খান তাহলে আপনার শরীরে পুষ্টিগুণের অভাব দূর হবে এছাড়াও খেজুর রক্ত বৃদ্ধির জন্য অনেক উপকারী। এটাই আসল কারণ যে ডাক্তার রক্ত বৃদ্ধির জন্য খেজুর খেতে বলেন।
গাজর
শুধুমাত্র ফল নয় সবজি খাওয়ার মাধ্যমেও রক্ত বাড়ে। সবচাইতে বেশি যে সবজিটি রক্ত বাড়ায় তার নাম হচ্ছে গাজর। গাজর সালাদ হিসেবে আমরা বেশি খাই। গাজর বা গাজরের জুস প্রতিদিন খেলে এটি যে শুধু রক্ত বাড়ায় তা না এটি শরীরের শক্তিও বৃদ্ধি করে, হাড় মজবুত করে এছাড়াও চোখের ক্ষমতা বাড়ায়।
বিটরুট
যে ব্যক্তি বা মহিলার শরীরে রক্তের পরিমাণ খুব কম রয়েছে ওদের জন্য বিটরুট ঔষধ হিসেবে কাজ করে। যদি আপনি দ্রুত ভাবে আপনার শরীরে রক্ত বৃদ্ধি করতে চান তাহলে আপনি বিটরুট খাওয়ার চেষ্টা করেন।
ভিটামিন সি জাতীয় ফল
সব ধরনের রসালো ভিটামিন সি জাতীয় ফল যেমন লেবু, কমলা, আম ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। দিয়ে আয়রন শুষে নেওয়ার জন্য ভিটামিন সি সবচেয়ে বেশি জরুরী। এর ফলে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের গতি ও বেড়ে যায়। তাই ভিটামিন সিযুক্ত ফল প্রতিদিন খাওয়ার চেষ্টা করব। অন্য কোন ফল খেতে না পারলেও একটি লেবু ও তিন-চারটি আমলকি খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
কলিজা
কলিজায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন ডি রয়েছে। রক্তস্বল্পতার প্রধান কারণ দেহে আয়রনের ঘাটতি। তাই রক্তশূন্যতায় যারা ভুগতেছেন তাদের নিয়মিত খাবার তালিকায় সম্ভব হলে কলিজা রাখুন। গরু বা খাসির কলিজায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। তবে যাদের রক্তচাপ রয়েছে তারা গরুর কলিজা খাবেন না।
দুধ বা টক দই
দুধ বা টক দই ভিটামিন ও প্রোটিন জোগাতে কাজ করে। দুধে প্রচুর পরিমাণ আয়রন না থাকলেও প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। এ খাদ্য উপাদান গুলো রক্তে হিমোগ্লোবিনের সংখ্যা বাড়িয়ে রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। তাই রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ বা ১০০ গ্রাম টক দই খাওয়া উচিত।
বাদাম
যেকোনো ধরনের বাদাম আপনার শরীরে রক্তের চাহিদা পূরণ করতে পারবে। প্রতিদিন এক মুঠো পরিমাণ বাদাম রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা চিবিয়ে খান। তবে শুধুমাত্র চিনা বাদাম খেলে হবে না চিনা বাদাম, কার বাদাম, কাজুবাদাম ও আখরোট সব ধরনের বাদাম অল্প পরিমাণ নিয়ে এক মুঠো করে প্রতিদিন খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
ড্রাক চকলেট
শিশুদের প্রিয় খাবার ড্রাগ চকলেট থাকে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। এ কারণে ডাক্তাররাও ড্রাগ চকলেট খেতে বলেন। প্রতিদিন অল্প পরিমাণ ড্রাগ চকলেট শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই খেতে পারে এতে করে শরীরে আয়রনের চাহিদা পূরণ হয়।
পূর্ণ শস্য জাতীয় খাদ্য
চাল , গম, বার্লি,, সাবুদানা, চিড়া এই খাবার রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য চমৎকার আয়রনের জোগাড় দেয়। যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছে তারা প্রতিদিন ভাত,, রুটি , সাবুদানা এমনকি চিড়া ভিজে খেতে পারবেন। এতে শরীরে রক্তের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।
আপেল
আপেলকে আলাদাভাবে উল্লেখ করতেছি রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য কারণ আপেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। সরাসরি শরীরে আয়রন নিতে চাইলে প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি করে আপেল খাবেন। দুই থেকে তিনটি আপেল ৩ দিন খাওয়ার চেষ্টা করবেন নিয়মিত দেখবেন কিছুটা হলে উপকার পাবেন।
কোন ফল খেলে শরীরের রক্ত বাড়ে
- কমলা
- কলা
- আঙ্গুর
- আপেল
কোন সবজি খেলে রক্ত হয়
বিশেষ কিছু শাকসবজি রয়েছে যা খেলে শরীরে রক্ত বাড়ে। প্রতিদিন টাটকা সবুজ শাকসবজি খেলে শরীরের রক্ত বাড়ে । তবে
- ব্রুকলি
- কুমড়া
- আলু
- টমেটো
- বিটরুট
- কচু বা কচু শাক
- ধনেপাতা
- ফুলকপি
- পালং শাক
এ সমস্ত সবজিতে বেশি পরিমাণে আয়রন থাকে তাই এই সবজি শরীরে রক্ত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে তারা ফুলকপি খাবেন না।
কোন মাছ খেলে শরীরে রক্ত হয়
শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে সামুদ্রিক মাছ অনেক কার্যকরী। কোন কোন মাছগুলো শরীরে রক্ত বৃদ্ধি করে জেনে নিন।
শিং মাছ খেলে শরীরে রক্ত বাড়ে কারণ এই মাসে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে।
আপনারা যদি নিয়মিত মাগুর মাছ খেতে পারেন তাহলে শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
পরিশেষ
শরীর সুন্দরভাবে গঠনের জন্য রক্তের প্রয়োজন। আর শরীরে রক্ত রয়েছে কিনা সেগুলো আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। আশা করা যায় আপনার এই আর্টিকেল পড়ে শরীরে রক্ত কিভাবে বৃদ্ধি করবেন কিভাবে শরীরে রক্ত শুরুতে দেখা দেয় সবকিছু জানতে পেরেছে। আপনাদের যদি এগুলো কোন সমস্যা থাকে আপনারা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url