ভালোবাসার গল্প অপেক্ষা[ লেখিকা নিরজনা]
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক এখানে আপনারা অপেক্ষা গল্পের সব পর্বগুলো পেয়ে যাবেন। গল্প পড়ে যদি আপনার হৃদয়কে কোমল না করে, চোখে পানি না আসে তাহলে সে গল্প পড়ে মজা নাই। অপেক্ষা গল্পটি বাস্তবের কিছু কাহিনী নিয়ে তুলে ধরা হয়েছে আশা করি গল্পটি আপনাদের ভালো লাগবে।
এখানে অপেক্ষা গল্পের পর্বগুলো পর্ব ১ পর্ব ২ পর্ব ৩ পর্ব ৪ পর্ব এভাবে সিরিয়ালে দেওয়া রয়েছে আপনাদের পড়ার সুবিধার জন্য।
ভূমিকা
গল্প পরেও মানুষ অনেক কিছু শিখতে পারে বাস্তব সম্পর্কে কিছুটা হলেও বুঝতে পারে। এজন্য জ্ঞানকে বিকাশিত করার জন্য বা মন ভালো করার জন্য হলেও কিছু সময় ব্যয় করে আমাদের গল্প পড়া উচিত। যদিও অপেক্ষা গল্পটি কাল্পনিক এবং বাস্তবের কিছু অংশ নিয়ে লেখা হয়েছে আশা করি আপনারা এই গল্পটি পড়লে ভালো লাগবে।
পর্ব ১
শীতের সকালটা আসলেই অনেক মিষ্টি। ফজরের নামাজ পড়ে কোরআন শরীফ পড়ে বোনকে নিয়ে বাইরে বের হয়েছি। যদিও কনকনে শীত তবে খারাপ লাগতেছে না সকালটা ভালোই লাগতেছে। আম্মু জানে না যে আমরা বাইরে আসছি জানার আগেই বাসায় যেতে হবে না হলে এই সকালবেলা আম্মুর বকা শুনতে হবে।
যাই হোক এতক্ষণে তো আমার পরিচয় দেওয়া হয়নি আমি মানতাহা। আমার পরিবারে আমি আম্মু আর ছোট বোন রয়েছে আব্বু অনেক আগেই আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছে😥 আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। আমার একটি স্বভাব রয়েছে সেটি হচ্ছে আমার জীবনে যা কিছু ঘটে সব ডায়েরিতে লিখে রাখি। সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি এজন্য কলেজের প্রতি একটু টান বেশি আর আজকেই প্রথম কলেজ যাব।
কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছি। আম্মু খাবার রেডি করে ডাকতেছে মানতাহা মা আয় খাবি না। আসছি মা😕 মা আমি খেয়ে যাব না আমাকে টিফিন দিয়ে দাও কলেজে গিয়ে খাব। আচ্ছা টিফিন দিচ্ছি তাও একটু খেয়ে যা না খেয়ে যেতে হবে না। না মা আমি খাব না কলেজে গিয়ে খাব এই বলে বাসা থেকে টিফিন নিয়ে কলেজের দিকে রওনা দিলাম।
কলেজে গিয়ে ক্লাসরুমে বসে আছি এখনো কোনো বান্ধবী হয়নি কারো সাথে ভালোভাবে পরিচয় হয়নিহ্ন তাই কলেজে তেমন ভালো লাগতেছে না। কিছুক্ষণ পর স্যার ক্লাসে আসলো এবং সবার কাছ থেকে পরিচয় নিল কিছু জ্ঞানমূলক কথা বলল আজকে প্রথম দিন তাই এভাবে ক্লাস শেষ করল। ক্লাস শেষ করে আমি কলেজে মাঠে গিয়ে বসলাম আম্মু টিফিন দিয়েছে সেই টিফিন বসে থেকে খাচ্ছিলাম হঠাৎ করে কে যেন এসে বলল বসতে পারি😕 আমি পিছনে ফিরে তাকালাম একটি ছেলে যেটা অনেক মায়াবী আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি হাঁ করে তারপর ছেলেটি আবার বলল আমি কি বসতে পারি।
আমি তাকে কি বলবো বুঝতে পারছি না অবশেষে বললাম যে হ্যাঁ বসেন আমাকে জিজ্ঞেস করার কি আছে। ছেলেটি পাশে বসলো এবং বলল হাই আমি নিবিড় তোমার সাথে পড়ি তোমাকে ক্লাসে দেখেছি এজন্যই তোমার পাশে এসে বসতে চাইলাম তোমার অসুবিধা হবে না তো। হ্যাঁ অসুবিধা তো হবে আপনি ছেলেমানুষ আমার পাশে বসেছেন আবার চিনি না জানি না একটু তো অসুবিধা হবে। আর আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলি না। নিবিড় বললো, আমি অপরিচিত কোথায়? আমি তো তোমার সাথেই পড়ি এখন থেকে তো আমরা একসাথে ক্লাস করব।
আচ্ছা ঠিক আছে এখন বলেন আমার এখানে এসে বসলেন কেন? নিবিড় খুব ফাজিল সে ফাজলামো করে বলতেছে আমার খুব ক্ষুধা লাগছে দেখতেছি তুমি এখানে বসে টিফিন খাচ্ছ তাই ভাবলাম তোমার কাছ থেকে টিফিন নিয়ে খাব আমাকে কি দেওয়া যাবে। আচ্ছা ঠিক আছে খান তবে বেশি দিতে পারব না। নিবিড় বলতেছে আমরা তো একসাথেই পড়াশোনা করি আমাকে তুমি করে বললেই পারো। ঠিক আছে তুমি করে বলার চেষ্টা করব আর আমি এখন বাসায় যাব এখানে আর বসে থাকতে পারবো না এই বলে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে আম্মু বলল এই প্রথম দিন কলেজ কেমন লাগলো আমি বললাম ভালো খারাপ না। রাতে খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পড়লাম পাশে আমার ছোট বোন রয়েছ। অন্যদিকে নিবিড় তার মায়ের সাথে বন্ধুর মতো সম্পর্ক। নিবিড় তার মাকে বলল মা আজকে আমি কলেজে একটা মেয়ের কাছ থেকে টিফিন খেয়েছি খাবারটি ভালই মজা ছিল। নিবিড়ের মা নিবিড় কে বলতেছে তোর এই ফাজলামি গুলো গেল না কারো জিনিস এভাবে খেতে হয় না বাবা আর কখনো খাবেনা এভাবে। যাও নিবিড় এখন তুমি রুমে গিয়ে পড়াশোনা কর।
নিবিড় তার রুমে গিয়ে পড়তে বসছে আর ভাবতেছে কালকে কলেজে গিয়ে দেখবো আমাদের ক্লাসে কতগুলো সুন্দরী মেয়ে রয়েছে যদি কাউকে ভালো লাগে তাহলে তার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করবো। এগুলো ভাবতে ভাবতে নিবিড়ের আর পড়া হলো না ঘুমিয়ে পরল।পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি নামাজ কালাম পড়ে প্রকৃতির সামনে বসে ডায়েরীতে নিবিড়ের সাথে দেখা হওয়া প্রথম দিন লিখে রাখলাম। এরপর খাওয়া দাওয়া করে কলেজে যাওয়ার জন্য বের হলাম রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি কোন রিক্সা পাচ্ছিনা।
কিছুক্ষণ পর দেখতেছি পিছন থেকে কে যেন বাইক নিয়ে আসতেছে আমার কাছাকাছি আসার পর বলতেছে কে গো টিফিন আপা আজকে টিফিন নিয়ে আসোনি কালকে খাবারটা কিন্তু ওয়াও ছিল। আমার আর বুঝতে দেরি হলো না যে এইটা কালকের ওই বদমাইশ ছেলেটা যে আমার টিফিন খেয়ে নিয়েছিল। তাকে দেখে আমার রাগ হয়ে গেল কিন্তু সে আমার সাথে ফাজলামি করে যাচ্ছে। তারপর কিছুক্ষণ পর একটা রিকশা আসলো আমি রিক্সায় গেলাম আর বদমাইশ ছেলেটা বাইক নিয়ে চলে গেল।
ক্লাসে গিয়ে বসে আছি পাশে একজন বসেছে তার নাম রিমি। তার সাথে আমার পরিচয় হয় এবং আমরা বন্ধু হয়ে যাই। ক্লাস শেষ করে রিমি আর আমি মাঠে গিয়ে বসে আছি গল্প করতেছি এ সময নিবিড় আসছে আমাদের কাছে এসে বলতেছে টিফিন আপা কি কর সে আমার নাম দিয়েছে টিফিন আপা কেমনটা লাগে😕 আমার সাথে ফাজলামো করতেছে আর আমার বান্ধবীর রিমির দিকে তাকিয়ে আছে আর আমার বান্ধবী রিমিও তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিবিড় বলতেছে এই টিফিন আপা তোমার ফেসবুক আইডি নাম্বার দাও কথা হবে তোমার সাথে পড়াশোনা বিষয়ে কথা বলব। আমি নিবিড় কে ফেসবুক আইডি দিলাম এরপর নিবিড় আমার বান্ধবী রিমির কাছ থেকেও তার আইডি চেয়ে নিল রিমিও তাকে তার ফেসবুক আইডি দিল।
কলেজ শেষ করে বাসায় আসতেছি আর ভাবতেছি ছেলেটা ভালই তার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করা যায়। অন্যদিকে নিবিড় ভাবতেছে টিফিন আপার বান্ধবী রিমিকে তার ভালো লাগছে সে পুরো রাস্তায় রিমির সেই তাকিয়ে থাকার চাওনি সেটাই ভাবতেছে। রিমিও মনে মনে ভাবতেছে নিবিড়কে তার ভালো লেগেছে সে থেকে প্রপোজ করবে।
মানতাহা নিবিড় ও রিমি এই তিনজনের সম্পর্ক কোন দিকে জল গড়াচ্ছে পর্ব ২ এ তা পেয়ে যাবেন।
পর্ব ২
রাতে পড়তে বসেছি আমার ছোট বোন লিজা আমার ফোন নিয়ে ভিডিও দেখতেছি এমন সময় মেসেঞ্জারে মেসেজ আসে শব্দ হলো আমি আমার ছোট বোনের কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে নিলাম কি দেখি নিবিড় মেসেজ করেছে। টিফিন আপা কি কর😕 কেমন লাগে এই ছেলে মেসেঞ্জারেও আমাকে টিফিন আপা বলে ডাকতেছে এমনকি আমার নিক নামটাও টিফিন আপা দিয়েছে। এভাবেই নিবিড়ের সাথে আমার মেসেঞ্জারে কথা বলা শুরু হলো সারাদিন কি করি না করি সব নিবিড়ের সাথে শেয়ার করি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আম্মু নাস্তা রেডি করে রেখেছে খাওয়া দাওয়া করে কলেজে গেলাম গিয়ে দেখি নিবিড় ও রিমি কলেজ মাঠে বসে রয়েছে। আমি তাদের কাছে গিয়ে বললাম হাই কেমন আছো সবাই। নিবিড় বলল টিফিন আপা তোর জন্য অপেক্ষা করতেছিলাম আয় বস এখানে। নিবিড় আর আমার সম্পর্ক এখন অনেক ক্লোজ হয়ে গেছে আমরা দুইজন দুইজন কে তুই করে কথা বলি। ক্লাসের সময় হয়ে গেল আমরা তিনজন ক্লাসে গেলাম।
ক্লাস শেষে নিবিড় আমাকে বলতে চল মানতাহা আজকে ফুচকা খাওয়াবো তোকে আমি বললাম কেন তুই খাওয়াবি কেন? নিবিড় বলতেছে আজকে আমার কাছে টাকা আছে অন্যদিন তো নাও থাকতে পারে তাই ভাবলাম আজকে ফুচকাটা খাওয়াই দেই অন্য সময় তোর কাছ থেকে খাব। নিবিড় রিমিকে বল রিমি তুমিও চলো আমরা তিনজন গিয়ে ফুচকা খাইলাম এরপর বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে আম্মু বলল কিরে তোর আজকে আসতে এত দেরি হল আমি বললাম আম্মু আজকে একটু বান্ধবীরা মিলে ফুচকা খেতে গিয়েছিলাম এজন্য একটু দেরি হয়ে গেছে। আম্মু বলল ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে নে। আমি দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমাই ছিলাম বিকেলে ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে গিয়ে বসে আছি এমন সময় দেখি নিবিড় মেসেজ করছে নিচের দিকে দেখ আমি নিচের দিকে দেখলাম দেখি নিবিড় সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি তো অবাক আমি ওকে মেসেজ দিলাম নিবিড় তুই এখানে কি করছিস নিবিড় বলতেছে আমি আমার টিফিন আপাকে দেখতে আসছি। দেখ নিবিড় ফাজলামি করবি না কি করতে আসছিস তাই বল আর তুই জানলি কি করে যে এখানে আমার বাসা। নিবিড় বলতেছে শোন মানতাহা তোর সাথে আমার মনের টান রয়েছে তাই খুঁজে খুঁজে তোকে পেয়ে গেলাম। আচ্ছা নিবিড় থাক আম্মু ডাকতেছে কাল কলেজে দেখা হবে আর তুই এখন এখান থেকে চলে যা।
আম্মু আমায় বলতেছে তুই বেলকনিতে কি করছিস তোকে এতক্ষণ ধরে ডাকতেছি আমি একা একা কাজ করতেছি কত দিকে সামলাবো আমি। আম্মু আমার উপর রেগে যাওয়াটাই স্বাভাবিক আমার আব্বু নাই আম্মুকে এসব কিছু দায়িত্ব নিতে হয়েছে আম্মুর উপর অনেক চাপ এজন্য আম্মু মাঝে মাঝে রেগে যায়। আমাদের কিছু জমি রয়েছে, ওখান থেকেই আমরা কিছু টাকা পাই তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে যায়। আম্মু বকা দেওয়াতে আমারও মন খারাপ হয়েছিল শুয়েছিলাম আম্মু এসে আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত দিয়ে বলতেছে দেখ মানতাহা তোর বাবা নাই তোদের দুই বোনকে নিয়ে আমি একাই সবদিকে সামলাচ্ছি তোদের ভালোর জন্যই তো এত কিছু করতেছি।
আমি যদি রাগের মাথায় বকা দেয় সেটা মনে নিস না মা। আম্মু এই কথা বলাতে আমি আম্মুকে জড়াই ধরে বললাম আম্মু আমি কিছু মনে করিনি। তোর বাবা নাই মা তোকে ভালো করে করতে হবে তোর ছোট বোন আছে আমি আছি আমাদের জন্য হলে তোকে ভালো করে পড়ে কিছু একটা করতে হবে। তোর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি এত সব কষ্ট সহ্য করে নিয়ে পড়াশোনা করাচ্ছি তুই আমার মুখ উজ্জ্বল করিস। আমি আম্মুকে বললাম ঠিক আছে আম্মু তুমি চিন্তা করো না তোমার এই মেয়ে একদিন তোমার মুখ উজ্জ্বল করবে।
সকালে কলেজে গিয়েছি গিয়ে চুপচাপ বসে আছি নিবিড় আসলো আমার পাশে বসলো বলল কিরে কখন আসছিস। এইতো কিছুক্ষণ হলো আসলাম। তো কিছু বল চুপ করে আছিস মন খারাপ নাকি? নারে এমনি একটু ভালো লাগছে না😕 চল ক্লাসে যাই ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। নিবিড় বলছে আমি আজকে ক্লাস করব না চল কোথাও গিয়ে গল্প করি রিমি আসবে। নারে আজ আমি ক্লাস করবো তোরা যা গল্প কর আমি ক্লাসে গেলাম। নিবিড় বলল যাও ভালো স্টুডেন্ট ক্লাস মিস করবে না। আমি নিবিড়ের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম কারণ ওইটা জানে না আমার পরিস্থিতি। নিবিড় ও রিমি দুজনেই চলে গেল আর আমি ক্লাসে চলে গেলাম।
রিমি নিবিড় কে জিজ্ঞেস করতেছে নিবিড় আমার সাথে থাকতে তোমার কেমন লাগতেছে। নিবিড় বলতেছে তোমার সাথে থাকতে মানে😊😊( নিবিড় খুব ফাজিল) রিমি বললো মানে এই যে আমরা একসাথে গল্প করতেছি সময় কাটাচ্ছি এটা কি তোমার ভালো লাগতেছে। নিবিড় বলল হ্যাঁ তোমার সাথে সময় কাটাতে আমার ভালই লাগে। ঠিক আছে নিবিড় সামনে তো ভ্যালেন্টাইন ডে ঐদিন আমরা কলেজে দেখা করি। তুমি ঐদিন কলেজে আসত পারবে?হে নিবিড় আমি আসতে পারবো তুমি ঐদিন কলেজে আসো তোমার সাথে কথা আছে। ঠিক আছে চলো আজকে তাহলে বাসায় চলে যাই।
আমি ক্লাস শেষ করে বের হলাম দেখে নিবিড় ও রিমি কোথাও নেই কলেজের পেছনের একটা জায়গা আছে ওখানে গিয়ে দেখি তারা দুজন গল্প করতেছে। তাদের গল্প করা দেখে আমি আর তাদের মাঝখানে না গিয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে ভালো লাগতেছে না নিবিড়ের সাথে ভালোভাবে কথাই হলো না। নিবিড় কে মেসেজ দিলাম কিরে কি করিস? নিবিড় রিপ্লাই দিলো টিফিন আপা আমি তো আপনার মত সারাক্ষণ পড়াশোনা করি না রিমির সাথে মেসেজ করতেছি। ঠিক আছে মেসেজ কর তাহলে। নিবিড় গুলো আচ্ছা টিফিন আপা জান আপনি পড়তে বসেন। আমি আর তার মেসেজের কোন রিপ্লাই করলাম না।
আমি ফোন রেখে দিয়ে পড়তে বসলাম। অন্যদিকে নিবিড় ও রিমি মেসেজে কথা বলে যাচ্ছে তাদের জন্য কোথায় শেষ হচ্ছে না। পড়া শেষ করে আমি ফোন হাতে নিয়ে মেসেঞ্জারে দেখলাম নিবিড় আমাকে কোন মেসেজ করিনি। ফোন রেখে দিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। অন্যদিকে রিমি ও নিবিড় অনেক রাত জেগে মেসেজ করতেছে। অন্যদিন নিবিড় ঘুমানোর সময় মান তাহাকে মেসেজ দেয় আজকে রিমির সাথে কথা বলায় তার মনে নাই যে মানতাহাকে মেসেজ দেওয়া হয়নি😥। নিবিড় পড়ে দেখল মানতাহা অনলাইনে নাই এজন্য আর মেসেজ না করে ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আম্মুকে বললাম আম্মু আজকে কলেজে যেতে ইচ্ছা করতেছে না বাসাতেই পরি আর তেমন কোন ক্লাস নাই আজকে। আম্মু বলল ঠিক আছে যেতে হবে না। নিবিড় ও রিমি কলেজে গিয়ে দেখে মানতাহা আজকে কলেজে আসিনি। নিবিড় রিমিকে বলে তুমি মানতাহাকে একটা ফোন দাও রিমি ফোন দিল কিন্তু মানতাহার ফোন বন্ধ।
নিবিড় টেনশনে পড়ে গেল মানতাহা তো কলেজ মিস করার মেয়ে না ওর আবার কিছু হলো না তো। নিবিড় রিমিকে বলতেছে রিমি চলো মানতাহার বাসায় যাই নিবিড় ও রিমি মানতাহার বাসায় আসে। বাসায় আমি আম্মুর কাছে সাহায্য করতেছি এমন সময় দেখি নিবিড় ও রিমি আমার বাসায় আসছে আমি তো দেখে অবাক। কিরে তোর আমার বাসায়? ফাজলামো করছিস না ফোন বন্ধ কেন তোর কলেজে যাসনি কতটা টেনশনে ছিলাম ভাবলাম তোর কিছু হলো নাকি নিবিড় রাগান্বিতভাবে কথাগুলো বলতে ছিল। আমি বললাম নিবিড় শান্ত হও বাসায় আসছিস কিছু খাওয়া দাওয়া করে তারপর যাবি। খাওয়া দাওয়া করে নিবিড় ও রিমি আমার বাসা থেকে চলে যায়।
আজকে তো ভ্যালেন্টাইন ডে কলেজে কি যাব কি যাব না ভাবতেছি। ভাবছি যাব যদি কোন ক্লাস হয় ভেলেন্টাইন ডে উপলক্ষে তো আর ক্লাস বন্ধ থাকবে না। জানি আজকে সবাই সাজুগুজু করে যাবে কলেজে তাই আমিও একটা নীল কালার শাড়ি পড়ে গেলাম। কলেজে গিয়ে দেখি রিমি অনেক সুন্দর করে সেজেগুজে আসছে নিবিড় এখনো আসেনি। আমরা দুজনে বসে আছি নিবিড় আসলো এসেই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে সে প্রথম দিনের মত।( নিবিড় মনে মনে বলতেছে মানতাহা তোকে আজকে সত্যিই অনেক সুন্দর লাগতেছে😊) কিন্তু কথাটা নিবিড় মনে মনে রাখল তারপর বলল টিফিন আপা তোমাকে শাড়িতে একদম মানাচ্ছে না রিমিকে দেখো কত সুন্দর লাগতেছে। এ কথা শুনে আমার মন অনেক খারাপ হয়ে গেল নিবিড় আমাকে এভাবে বলল😥।
নিবিড় আমাকে বলতেছে মানতাহা আজকে তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। আমি বললাম কি সারপ্রাইজ নিবিড় একটি গোলাপ ফুল নিয়ে আমার সামনে আসলো। নিবিড় আমার সামনে আসাতে আমার অনেক অস্থিরতা কাজ করতেছিল বুকের ভিতরটা কেমন জানি ধরফর করতেছিল। আর মনে মনে ভাবতেছিলাম আমি যেটা ভাবতেছি নিবিড় কি সেটাই করবে ভয় কাজ করছে আমার ভালো লাগতেছে। নিবিড় হাটু পেরে আমার সামনে বসে গোলাপ ফুল নিয়ে বলল আই লাভ ইউ রিমি😊 আমি রিমিকে আজকে প্রপোজ করব তাই তোর সামনে প্র্যাকটিস করে নিচ্ছি তুই রিমি হয়ে উত্তর দিবি।
এটা শোনার পর ভেতর থেকে দুমড়ে মচকে শেষ হয়ে গেলাম আমি। আমার অজান্তেই কেন জানি চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করল কিন্তু নিবে সেটা খেয়াল করিনি। আমি নিবিড় কে জিজ্ঞেস করলাম তুই রিমিকে ভালবাসিস? নিবিড় বলল হ্যাঁ আমি অনেক ভালবাস আর রিমিও আমাকে ভালবাসে আমি এটা বুঝতে পারি। আমি বললাম তাহলে তো ভালই। ঠিক আছে চল তাহলে তুই রিমিকে প্রপোজ করবি এখন। তারপর নিবিড় এসে রিমিকে প্রপোজ করে।
নিবিড় রিমিকে প্রপোজ করার পর রিমি কি একসেপ্ট করে আর মানতাহার কি পরিস্থিতি হয় তাদেরকে ফ্রেন্ডশিপ থাকে জানতে হলে পর্ব তিন পড়ুন।
পর্ব ৩
গত কয়েকদিন থেকে আমি অসুস্থ তাই কলেজে যাওয়া হয়নি। ফোনটা হাতে নিলাম messenger এ গেলাম অসুস্থ থাকার জন্য অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে দূরে ছিলাম। দেখি নিবিড় ও রিমি দুজনেই মেসেজ করেছে আমাকে তাদের মেসেজের রিপ্লাই করলাম। তবে নিবিড় আর আগের মত নাই আর তেমন ফোন বা মেসেজ দেয় না হয়তো রিমিকে নিয়ে ব্যস্ত। আমি এসব নিয়ে তেমন কিছু ভাবতেছি না সামনে এক্সাম আমার। অন্য কয়েকটা মেয়ের মত তো আমার জীবন না আমাকে তো অন্য স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।
আমার কষ্টগুলো ডায়েরিতে লিখে রাখা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ প্রকাশ করতে পারবো না। অন্যদিকে নিবিড় ও রিমির প্রেম ভালোই চলতেছে। নিবিড় রিমিকে ফোন করে বলে রিমি তুমি বাসার গেটের কাছে থাকো আমি কলেজে যাওয়ার সময় বাইকে করে নিয়ে যাব নি। রিমি ধনী পরিবারের মেয়ে দেখতে সুন্দর অনেক স্মার্ট যে কোন ছেলে তার প্রেমে পড়বে। এজন্য তো নিবিড় রিমির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। রিমির বাসার কাছ থেকে নিবিড় তাকে নিয়ে কলেজে যাচ্ছে আর কি বিষয়ে হাসাহাসি করতেছে। আমি রিক্সা করে কলেজ যাচ্ছি তাতেই চোখ পরল রিমি ও নিবিড়ের দিকে।
তাদের একসাথে দেখে বুকের ভেতরটা চিনচিন করে উঠলো কেন এত কষ্ট হচ্ছে তাদের একসাথে দেখে চোখ দিয়ে অঝরে টপটপ করে পানি পড়তেছে আমার অজান্তে। কোনভাবে কলেজে গিয়ে ক্লাস করলাম ক্লাস শেষে বের হয়েছি বাসায় আসার উদ্দেশ্যে এমন সময় নিবিড় পিছন দিক থেকে ডাক দেয মানতাহা বলে। নিবিড় আমার কাছে আসলো বলতেছে কিরে তোর খোঁজ নাই পড়াশুনা নিয়ে খুব ব্যস্ত নাকি। আমি বললাম না রে তেমন কিছু না এমনি ওই আর কি। একটু পরে রিমি ও আসলো। রিমি কেন জানি আমার সাথে তেমন কথা বলতেছে না। রিমি নিবিড় কে বলতেছে চলো আমার ক্ষুধা লাগছে কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে কিছু খায় তারপর তুমি আমাকে বাসায় দিয়ে আসবা।
নিবিড় আমাকে বলল চল মানতাহা তুইও আমাদের সাথে। আমি রিমির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম রিমি চাইনা আমি তাদের সাথে যাই আর আমি যেতেও চাই না। আমি নিবিড় কে বললাম না রে বাসায় কাজ আছে আম্মু তাড়াতাড়ি যেতে বলছে তোরা যা পরে কোন সময় যাবনি বলে চলে আসলাম।রিকশায় বাসায় আসতেছি আর ভাবতেছি নিবিড়ের সামনে আর যাব না নিবিড়ের থেকে অনেক দূরে চলে যাবো। নিবিড় কে দেখলেই আমার বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে মনে হয়নি শুধু আমার আর অন্য কারো না মনে হয় নিবিড় শুধু আমার আর অন্য কারো না। নিবিড় ও রিমি রেস্টুরেন্টে খাবার অর্ডার করে বসে আছে। নিবিড় রিমির দিকে তাকিয়ে আছে রিমি তোমাকে অনেক সুন্দর লাগতেছে।
রিমি বলতেছে হুম আমি অনেক সুন্দর এই জন্যই তো সব ছেলেরা আমাকে দেখে ক্রাশ খায়। নিবিড় রেগে গিয়ে বলল শুনো এখন শুধু আমি আছি তোমার জীবনে অন্য কোন ছেলের কোন কাহিনী যেন আর না থাকে তুমি শুধু আমার রিমি। রিমি ও বলতেছে আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি নিবিড়। রিমির ফোনে কে জানি বারবার ফোন দিচ্ছে এজন্য রিমি ফোন অফ করে দিল কিন্তু এটা নিবিড় টের পাইনি। নিবিড় রিমিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজে বাসায় চলে যাই।
আমি বাসায় এসে আম্মুকে বুঝায় আম্মু আমরা ঢাকাতে চলে যাই। ওখানে ভালো কথাও ভর্তি হই তাহলে আমি ভালো জায়গায় এডমিশন নিতে পারব আম্মু। প্রথমে আম্মু না না করে কিন্তু পরে বলতেছে দেখি কি করা যায়। ঢাকাই আমার মামা আছে তাদের কাছে আম্মু কথা বলে আমাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে। আর আমাদের এই বাড়ি ভাড়া দিয়ে যে টাকা পাবো আর জমা জমি থেকে যে টাকা পাব সেগুলো চাচাদের দায়িত্বে দিয়ে যাচ্ছি তারা আমাদের মাসে মাসে টাকা পাঠাবে। এক মাসের মধ্যেই আমরা সব ঠিকঠাক করে নিলাম আমি কলেজে গিয়ে ট্রান্সফার নেওয়ার জন্য স্যারের সাথে কথা বলে টাকায় উত্তরা কলেজে ট্রান্সফার নিলাম।
এই বিষয়ে মামা অনেক সাহায্য করেছে আমাদের। আজকে এই কলেজে এসে যাচ্ছি স্যারদের কাছ থেকে বিদায় নিতে এর মাঝে নিবিড়ের সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু সেভাবে কোন কথা হয়নি। মনে মনে ভাবতেছি আল্লাহ নিবিড়ের সাথে যেন দেখা হয় শেষবার যেন তার মুখটা আমি দেখে যেতে পারি। তাতেই দেখে নিবিড় আমার সামনে তাকে দেখামাত্র আমার বুকটা চিনচিন করে উঠলো তাকে দেখলেই আমার হার্টবিট বেড়ে যায়। নিবিড় বলতেছে কিরে তোর মুখ শুকনো লাগতেছে কোন টেনশন করছিস নাকি? তুই তো ঠিকঠাক আমার সাথে কথাই বলছিস না দেখাও করছিস না কি হয়েছে বলতো আমাকে।
নিবিড় কে দেখলেই আমার কেমন জানি লাগে একটা ভিতর থেকে আমি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কিরে হা করে কি দেখছিস সে প্রথম দিনের মতো তোর টিফিন খেয়েছিলাম তাই এভাবে তাকিয়ে ছিলিস আর আজ কে তো টিফিন খাইনি কিছু জিজ্ঞেস করছি তোকে। আমি নিবিড়কে বললাম নিবিড় তুমি না অনেক ভালো। রিমির কপাল অনেক ভালো যে তোমার মত কাউকে পেয়েছে রিমিকে কষ্ট দিও না ভালো রেখো। নিবিড় বলতেছে কিরে তুই আমাকে তুমি করে বলছিস আবার এভাবে কথা বলছিস তুই কি কোথাও চলে যাচ্ছিস নাকি। নারে এমনি মনে হল তাই বললাম থাক আম্মু তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে বলছে। নিবিড় বলতেছে চল তোকে আমি আজকে বাসায় রেখে আসবো। আমি কেন জানিনা নিবিড় কে আর না বললাম না আজকেই তো আর তো কখনো বলবে না চল তোকে বাসায় রেখে আসি।
এমন সময় রিমি আসলো বলতেছে নিবিড় চলো বাসায় রেখে আসো আমায়। নিবিড় রিমিকে বলল রিমি আজকে তুমি একাই বাসায় যাও আমি আজকে মানতাহাকে বাসায় রেখে আসি ওর শরীরটা ভালো না। বুঝতে পারলাম রিমি রেগে গেল আমি নিবিড় কে বললাম থাক আমি যেতে পারব তুই রিমিকে নিয়ে যা। নিবিড় বলতেছে বেশি কথা বলিস না চুপচাপ আমার সাথে চল। নিবিড় যখন আমাকে এভাবে বলে আমার কেন জানি অনেক ভালো লাগে মনে হয় আমার আপন কেউ খুব কাছের মানুষ। আমি নিবিড কে বললাম নিবিড় আজকে আমরা রিকশায় করে যাব। রিকশায় যাওয়ার পথে আমি নিবিড়ের দিকে তাকাই আছি নিবিড় বলতেছে কিরে তুই আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছিস মনে হয় দেখিস নি আগে আমার তো লজ্জা লাগতেছে।
তার লজ্জা লাগতেছে এটা শুনে আমার হাসি থামাতে পারলাম না। নিবিড় মনে মনে বলতেছে মানতাহা তোকে হাসলে অনেক সুন্দর লাগে।নিবিড় বলতেছে তোকে একটা কথা বলব মানতাহা তুই অনেক মায়াবতী। যে তোর মায়ায় পড়বে তোকে কোনদিন ভুলতে পারবেনা। কথা বলতে বলতে আমার হাত নিবিড়ের হাতের উপর টাচ লাগছে ঠিক তখনই বুকের ভেতরটা চিনচিন করে উঠলো মনে হলো বিদ্যুতের শর্ট খাইলাম। আমরা দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। বাসার কাছাকাছি চলে আসছি আমি বললাম নিবিড় তুই এখান থেকে চলে যা আমি যেতে পারব আম্মু দেখলে সমস্যা হবে। নিবিড় বলতেছে আজকে কেন জানি তোকে ছাড়তে ইচ্ছে করতেছে না মনে হচ্ছে তোর কাছেই থাকি তোর সাথেই থাকি। আমি কিছু বলার ভাষা পেলাম না বললাম ঠিক আছে নিবিড় তুই এখন চলে যা।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছি আমি আম্মু আর বোন। সকালে ট্রেনে আমরা চলে যাব ঢাকাতে। তাই রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম সকালে ট্রেনে আবার যেতে হবে। নিবিড় শুয়ে শুয়ে ভাবতেছে মানতাহার মধ্যে অনেক মায়া আছে সেটা আগে লক্ষ্য করিনি। তার সাথে কিছুক্ষণ থেকে মনে হল সে আমার অনেক আপনজন যেটা রিমির সাথে ঘুরে আমি কখনো ফিল করিনি। আমি কালকে আবার মানতাহার সাথে দেখা করব। ভাবতে ভাবতে রিমির ফোন আসলো। হ্যালো নিবিড়, কী হয়েছে তোমার ফোন দিচ্ছ না মানতাহাকে রেখে আসে আমার আর খোঁজ নিছো তুমি।
নিবিড় বলতেছে ভালো লাগতেছে না শুয়ে আছি। রিমি বলতেছি এখন তো আমাকে আর ভালো লাগবে না মানতাহার সাথে ঘুরে আসছো। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে অনেক ঝগড়া হল নিবিড় ফোন কেটে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে ঘুম থেকে উঠলাম আমাদের সব জিনিসপত্র নিয়ে আমরা এখন ট্রেনে করে ঢাকা চলে যাব।
মানতাহা তো ঢাকায় চলে যাচ্ছে আর নিবিড় জানে না কিন্তু নিবিড়ের মনে মানতাহার জন্য একটা ফিল কাজ করতেছে। নিবিড় কি আর মানতাহাকে খুঁজে পাবে? জানতে হলে পর্ব চার পড়ুন
পর্ব ৪
আমরা ঢাকায় পৌঁছে মামার বাসায় উঠেছি। আপাতত এখন মামার বাসাতেই থাকবো। একদিন রেস্ট করে মামাকে নিয়ে আমি আম্মু কলেজে গিয়ে ভর্তি হয়ে আসলাম। ঢাকাতে এসে প্রথমে একটু খারাপ লাগতেছে ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তে। নিবিড় যেন আমার সাথে যোগাযোগ করতে না পারে এজন্য আমি আমার ফেসবুক আইডি সব চেঞ্জ করে ফেলেছি। আমি এটা বিশ্বাস করি নিবিড় যদি আমার ভাগ্যে থাকে তাহলে ঠিক কোন না কোনদিন তার সাথে আমার দেখা হবে আর আমি তাকে আমার করে পাবো।
এখন শুধু আমায় পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে আম্মুর ইজ্জত পূরণ করতে হবে। আম্মু হাতের কিছু কাজ জানে মামা কিছু সাহায্য করে গ্রামের বাড়ি থেকে কিছু টাকা পাচ্ছি এই দিয়ে আমাদের চলে যাচ্ছে ঢাকা শহরে। অন্যদিকে নিবিড় কলেজে গিয়ে শুনতে পাই মানতাহা কলেজ থেকে চলে গেছে ট্রান্সফার নিয়ে। তারপর নিবিড় মানতাহার বাসায় গিয়ে দেখে নাই ওখানকার লোকজন বলে তারা ঢাকায় চলে গেছে। এ কথা শুনে নিবিড়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল সেটা বিশ্বাসই করতে পারতেছে না যে মানতাহার সাথে তার দেখা হবে না।
এদিকে আমি আমার নতুন কলেজ পড়াশোনা সব মিলিয়ে অনেক ব্যস্ত আছি মাঝে মাঝে নিবিড়ের কথা মনে পড়লে একটা অজান্তে হাসি পায়। এদিকে নিবিড় ও পড়াশোনায় অনেক মনোযোগ দিয়েছে রিমির সাথে তেমন আর ঘোরাফেরা করার সময় হয় না। নিবিড় রিমিকে বলে রিমি তোমার প্রতি আমার শুধু একটা আকর্ষণ ছিল আমি তোমায় ভালবাসতে পারিনি কিন্তু মানতাহার প্রতি আমার একটা মায়া কাজ করে সেটা মানতাহা চলে যাওয়ার পর আমি বুঝতে পারছি। আর মানতাহা যখন ছিল তাকে জেলাস ফিল করার জন্য আমি তোমার সাথে বেশি ঘোরাফেরা করছি। তুমি আমায় মাফ করে দিও রিমি।কি বিষয় দিন নিবে কি কিছু না বলে ওখান থেকে চলে যায়।
দেখতে দেখতে অনেক বছর পার হয়ে গেল নিবিড় গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে একটি প্রাইভেট সেক্টরে জব পায় ঢাকাতে। নিমিতার বাবা-মাকে নিয়ে ঢাকাতে চলে আসছে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে। আম গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে একটা প্রাইভেট সেক্টরে জব পেয়েছি আমরা একটা আলাদা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছি সেখানে আমি আম্মু আর আমার বোন থাকি। ইনশাল্লাহ আমি আমার বোন ও আমার আম্মুর দায়িত্ব নিতে পেরেছি।
আজকে একটু অফিসে তাড়াতাড়ি যাইতে হবে আজ অফিসে আমাদের নতুন জিএম স্যার আসবে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করতে হবে। তাই সকাল বেলা উঠে গোসল করে একটা কালো কালার শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে অফিসে গেলাম। কিন্তু জিএম স্যার কে বরণ করতে গিয়ে তাকে দেখে সে আগের মত বুক চিনচিন করতে লাগলো, হার্টবিট বেড়ে গেল আমি আর নিজের মধ্যে নাই আমি এই কাকে দেখতেছি😕 আমি জোরে করে বলে উঠি নিবিড় তুই🤨 নিবিড় ও বলে ওঠে মানতাহা তুই😊 অফিসে অনেক লোকজন এজন্য আমরা আর তেমন কথা বললাম না।
অফিস শেষ করে বাসায় আসবো ঠিক তখনই নিবির পিছন থেকে ডাক দেয় মানতাহা। এই ডাক আমি অনেকদিন শুনিনি নিবিড়ের কাছ থেকে এই ডাক শুনে কি যে ভালো লাগতেছিল যা বোঝাতে পারবো না।তারপর আমি আর নিবিড় একটা কফিশপে গিয়ে বসলাম। যদি অনেকক্ষণ চুপ আছি কিছু বলতে পারতেছি না। তারপর আমি নিবিড় কে বললাম রিমির কি খবর। তোরা কি বিয়ে করছিস রিমি ও কি ঢাকাতে আসছে। নিবিড় কিছু বলতেছে না শুধু আমার দিকে তাকায় আছে। আমি তাকে বলতেছি কিরে কিছু বল উত্তর দে।
নিবিড় উত্তর দেয় আই লাভ ইউ মানতাহা। তুই কি আমায় বিয়ে করবি? যে কথাটা আমি সাত আট বছর আগে না বলতে পেরে যে কষ্টটা সহ্য করেছি আমিও সেই কষ্ট পেতে চাই না। তাই আজ তোকে ডিরেক্ট বলেই ফেললাম কিন্তু তোর ইচ্ছা তুই কি বলবি। নিবিড়ের কাছ থেকে এই কথা শোনার পর আমি অবাক হয়ে গেছি। আমি ভাবতেই পারতেছি না নিবিড় আমাকে এগুলো বলতেছে। আমি নিবিড় কে বললাম নিবিড় তোর কি কিছু হয়েছে পানি খাবি। নিবিড় বলতেছে আমার কিছু হয়নি আমি যেটা বললাম সেটার উত্তর দে। আমি বললাম রিমির কি হবে।
তুই চলে আসার পর রিমির সাথে আমার ব্রেকআপ হয়ে গেছে। আমি রিমিকে বলেছি রিমি তুমি শুধু আমার আকর্ষই ছিলা কিন্তু মানতাহার উপর আমার অনেক মায়া আমি ওকে ভালোবাসি। বিশ্বাস কর তুই ছিলি বলে আমি রিমির সাথে বেশি ঘোরাফেরা করছি তোকে যারা জেলাস ফিল করার জন্য। কিন্তু তুই যে হঠাৎ করে এভাবে হারায় যাবি তোকে আর খুঁজে পাবোনা আমি ভাবতে পারিনি। প্রেমের বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগে। দেখ মানতাহা তোকে আমি আর হারাতে চাই না তুই যদি চাস তাহলে আমি আন্টির সাথে কথা বলবো।
আর যদি না চাস আমায় বলে দে আমি এখান থেকে চলে যাব। নিবিড় তুই জানিস না আমি কতটা জেলাস ফিল করতাম তোকে আর রিমিকে দেখে। তোদের আমি ওভাবে দেখতে পারবো না বলে কলেজ থেকে ট্রান্সফার নিয়ে ঢাকাতে চলে আসছি। নিবিড় মানতা হার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। নিবিড় বলে ওঠে মানতাহা তুই আমায় ভালবাসিস আগে বলিস নি কেন এবারে আমায় জড়িয়ে ধরে।নিবিড় বলে তুই তো আমায় বলে আসতে পারতিস অন্তত যোগাযোগ টা তো রাখতে পারতিস। আচ্ছা ঠিক আছে আমি যদি না আসতাম তাহলে তো জানতে পারতাম না তুই আমার এত ভালবাসিস।
আর আমি জানতাম তুই যদি আমার কপালে থাকিস তাহলে আমি ঠিক কোন না কোনদিন তোকে পাবো এই বিশ্বাস নিয়েছিলাম।আমি তাহলে কালকে আব্বু আম্মুকে নিয়ে তোর বাসায় যাব কথা বলতে। আমি বললাম ঠিক আছে, আমি আম্মুকে বলব ঠিক আছে তাহলে আজকে বাসায় যাই। এই বলে আমরা দুজনেই পাশেই চলে আসলাম।
পরের দিন নিবিড় ও তার আব্বু আম্মু আমাদের বাসায় আসে। আম্মু তো নিবিড় কে আগেই দেখেছে আম্মুর পছন্দ। তো পারিবারিকভাবে কথা বলে আজকে আমাদের রেজিস্ট্রিটা করে রাখলাম অনুষ্ঠান দুইদিন পরে হবে। অবশেষে আমি আমার নিবিড় কে পেয়ে গেলাম। আমি তার জন্য মন থেকে অপেক্ষা করছিলাম এজন্য আল্লাহ তায়ালা আমাকে তার ভাগ্যে রেখেছে আর আমার ভাগ্যে থাকে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আল্লাহ যদি কপালে লিখে রাখে আর কারো জন্য যদি মন থেকে অপেক্ষা করা যায় ভালোবাসা যদি পবিত্র হয় যোগাযোগ না থাকলেও সে ভালবাসার পূর্ণতা পায়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url