ব্রকলি খাওয়ার উপকারীতা!

ব্রকলি একটি শীতকালীন সবজি যদিও এই সবজিটি তেমন পরিচিত নয়। কিন্তু ব্রকলি খাওয়ার উপকারিতা অনেক যা শরীর ও স্বাস্থ্য কে ভালো রাখে, ওজন কমাতেও সাহায্য রাখে এছাড়াও ক্যান্সার প্রতিরোধ ব্রকলির উদান রয়েছে।
ব্রকলি খাওয়ার উপকারীতা!

এই আর্টিকেল আপনারা ব্রকলি খাওয়ার উপকারিতা, ব্রকলি খাওয়ার নিয়ম, ব্রকলির দাম, ব্রকলির ছবি, ব্রকলি খাওয়ার অপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারবেন।

ভূমিকা

ব্রকলি শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি সবজি। ফুলকপির মতোই ব্রকলি শুধু ব্রকলির রং সবুজ। এ ব্রকলি কাঁচা বা রান্না করে দুই ভাবে খাইতে পারবেন। ব্রকলি ক্যান্সার ও আরো নানা ধরনের রোগ থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়া নিয়মিত ব্রকলি খেলে ওজন কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্রকলি খাওয়ার উপকারিতা
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি হচ্ছে ব্রকলি। এটি যে কোন বাসায় সালাদ করে বা রান্না করে খাইতে দেখা যায়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম আইরন ও নানান ধরনের ভিটামিন
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আন্টি ইনফ্লামেটরি সঙ্গে ক্যালরির পরিমাণও কম যার ফলে এটি নিয়মিত খেলে শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। চলুন তাহলে জেনে নিন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ব্রকলি খাওয়ার পর কি কি উপকার হয়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে


ব্রকলি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে এর পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ব্রকলি শরীরে ইস্ট্রোজেন এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে যাতে ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে না। ব্রকলি জরায়ু ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এছাড়াও মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে অনেক কার্যকরী।

কোলেস্টেরল কমায়

কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে ব্রকলি কারণ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। যা দ্রবণীয় অবস্থায় থাকে অর্থাৎ এই ফাইবার জলে দ্রাব্য। এ ধরনের ফাইবার শরীর থেকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বের করে দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে ব্রকলি শরীর থেকে ৬ পার্সেন্ট খারাপ কোলেস্টেরল বের করতে পারে।

হার্ট ভালো রাখে

ব্রকলি এর স্বাস্থ্য গুণ রক্তনালীকে নানান সমস্যায় পড়া থেকে রক্ষা করতে পারে। বিশেষ করে যাদের শরীরে শর্করা এর পরিমাণ বেশি অর্থাৎ ব্লাড সুগার বেশি রয়েছে তাদের রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভব না থাকে। কিন্তু এই ব্রকলি এ ধরনের সমস্যা প্রতিরোধ করে। ব্রকলির মধ্যে ফাইবার, ফ্যাটি এসিড, ও নানান ধরনের ভিটামিন থাকে এর ফলে রক্তচাপ এর সঠিক মাত্রা বজায় থাকে। এছাড়া ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল রোধ করতে পারে যা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে থাকে ভিটামিন ৬ যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

ওজন কমায়

ওজন কমাতে সাহায্য করে ব্রকলি। এরমধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি উপকারী। ব্রকলির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে।
মস্তিষ্কের উপকার

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা

উন্নত করা ও স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতেও সক্ষম ব্রকলি। বিশেষজ্ঞদের মতে ব্রকলির মধ্যে সালফারওজাপিন নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা বয়স বাড়ার সাথে স্মৃতি ভ্রম রক্ষা করতে সাহায্য করে। এর বায়ু একটিভ কম্পাউন্ড মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়।

রক্তশূন্যতা দূর করে

বিশেষজ্ঞরা বলেন এক কাপ বা ১৬৫ মিলিগ্রাম রান্না করা ব্রকলি তে রয়েছে এক মিলিগ্রাম আয়রন। এই পরিমাণ আয়রন প্রতিদিন শরীরের আয়রনের চাহিদার ৬% পূরণ করতে পারে। আয়রন রক্তশূন্যতা দূর করতে অনেক প্রয়োজনীয়।

হাড়ের উপকার

ব্রকলি তে থাকে ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়াম এই দুই উপাদান হারে স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ব্রকলিতে ক্যালসিয়াম ছাড়াও থাকে ম্যাগনেসিয়াম জিংক ও ফসফরাস। এ উপদানগুলো বড় মানুষ এছাড়াও ছোটদের জন্যও অনেক উপকারী।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেন

হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে ব্রকলি অনেক কার্যকর। তাই এই ধরনের সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা কিন্তু প্রতিবেলায় খাবারের সঙ্গে এক টুকরো ব্রকলি রাখবেন। অন্যদিকে যারা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগতেছেন তারা নিয়মিত ব্রকলি খেলে এ ধরনের সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে

ত্বক ভালো রাখে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ব্রকলি। ত্বকের যত্ন বাইরে থেকে যেমন প্রয়োজন তেমনি ভিতর থেকেও প্রয়োজন। ব্রকলিকে বলা হয়ে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পাওয়ার হাউস। অন্যদিকে ভিটামিন সি, কপার হাউস ও জিংকের ভালো উৎস এটি। এসব উপাদান তক কে ভালো রাখে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করে। আবার সূর্যরশী ও দূষণের ফলে ত্বকে যে ক্ষতি হয় তা থেকে রক্ষা করে ব্রকলি তে থাকা এর উপাদান গুলি।

পরিপাকতন্ত্রকে ঠিক রাখে

ব্রকলি প্রাকৃতিক ফাইবার সমৃদ্ধ সমৃদ্ধ খাবার বলে দেহের পরিপাকতন্ত্রকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে। হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এমনকি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

হৃদরোগ প্রতিরোধ করে

হৃদরোগ প্রতিরোধে ব্রকলি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এর উপকারী পুষ্টিগুণ উপাদান ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মানব দেহের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এই ব্রকলি তে থাকা ডি এ নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোন ধরনের ক্ষতিকে দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

ব্রকলি খাওয়ার নিয়ম

ব্রকলি কে ফুলকপি পরিবারের একটি সদস্য বলা হয়। ব্রকলি ও ফুলকপি দেখতে একই রকম শুধু রংটা আলাদা। ছোটবেলা যখন এর নাম জানতাম না তখন একে সবুজ ফুলকপি বলতাম। বিগত কয়েক বছরে এই সবজির বেশ চাহিদা বেড়েছে। ব্রকলির যত গুনাগুন রয়েছে তা আপনারা জানেন তাই যে সময়টাতে ব্রকলি পাওয়া যায় সেই সময়ে খাদ্য তালিকায় ব্রকলি রাখা উচিত। এই সবজিটি এখন সবাই খেতে পছন্দ করেন কিন্তু মজা করে রান্না করে খেয়ে অনেক বড় ভুল করেন। বেশি সুস্বাদু করে রান্না করতে গেলে এর গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। আসুন তাহলে জেনে নিন ব্লকলি কিভাবে খেলে এর গুনাগুন নষ্ট হয়ে যাবে না।
ব্রকলি খাওয়ার দুইটি পদ্ধতি হলো

প্রথম পদ্ধতি

  • ব্রকলি ভালোভাবে কেটে সুন্দরভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। একটি যেহেতু একটি সফট ভেজিটেবল তাই এটিকে বড় বড় করে কাটলেই হবে।
  • এরপর একটি পাত্রে ব্রকলি গুলো দিয়ে সামান্য সামান্য পরিমাণ পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে।
  • অতিরিক্ত ফোটানোর দরকার নাই। আর এটি ফুটানো হলে সাইড করে রেখে দিবেন।
  • এরপর আরো কিছু সবজি যেমন গাজর ফুলকপি বরবটি এগুলো সামান্য পরিমাণ করে নিবেন চাইলে আপনারা আরো কিছু( যেমন মটরশুঁটি, বিটরুট, বাঁধাকপি, সিম) দিতে পারেন।
  • এরপর গ্যাস এ একটি কড়াই বসিয়ে দিবেন তারপরে সামান্য পরিমাণ তেল দিবেন। তেল গরম হয়ে গেলে গাজর ফুলকপি ও বরবটি তেলে দিয়ে সামান্য লবণ ও হলুদ দিয়ে ভালোভাবে ফ্রাই করে নিবেন এ সময় কিন্তু ব্রকলি দিবেন না।
  • গাজর ফুলকপি ও বরবটি এ সবজি গুলো ভালোভাবে ভেজে নেওয়ার পর গরম পানিতে ফুটিয়ে রাখা সেই ব্রকলি গুলো দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে নামিয়ে নিতে হবে ব্রকলি গুলো বেশি ভাজা যাবেনা।
  • ব্রকলি গুলো দেখে মনে হবে বেশি ভাজা হয়নি তবে এভাবেই রাখতে হবে বেশি ভাজা যাবে না বেশি ভাবলে গুনাগুন নষ্ট হয়ে যাবে।
  • এরপরে সবজিগুলো আপনি ভাত দিয়ে বা রুটি দিয়ে খেতে পারবেন।

দ্বিতীয় পদ্ধতি

  • এক্ষেত্রেও ব্রকলি গুলো সুন্দরভাবে কেটে নিতে হবে।
  • এক্ষেত্রে ব্রকলি গুলো গরম পানিতে ফুটাতে হবে না গরম পানি করে ব্রকলি গুলো সেখানে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
  • এক্ষেত্রেও আলাদা করে সবজি নেওয়া লাগবে কিন্তু ফুলকপি যেটি নিবেন সেটি গরম পানিতে ভাপিয়ে নিবেন।
  • এরপরে আপনাদের নিতে হবে ডালিয়া। আপনারা কয়জনে রান্না করবেন সে হিসাব পানিতে ভিজায় রাখবেন।
  • এরপর গরম কড়াইয়ে পানি দিবেন তারপর ভিজিয়ে রাখা এ ডালিয়া সেই পানিতে দিবেন তারপর ডালিয়াটি যখন ফুটতে শুরু করবে তখন একে একে কেটে রাখা সব সবজিগুলো দিয়ে দিবেন।
  • এরপর এই সবজিগুলোর মধ্যে কয়েকটা কাঁচামরিচ দিয়ে দিবেন।
  • ডালিয়া ও সবজিগুলো ভালোভাবে ফুটে উঠলে এর গরম পানিতে যে ব্রকলি গুলো ভিজিয়ে রাখছিলাম সেগুলো দিয়ে দিতে হবে
  • এরপর যখন সবজি ও ব্রকলি গুলো ভালোভাবে ফুটবে সেদ্ধ হয়ে যাবে তখন নামিয়ে নিবেন। তাহলে তৈরি হয়ে যাবে মিক্সড ভেজিটেবল ডালিয়া।
  • এই খাবারটি কিন্তু বয়স্ক থেকে শুরু করে ছোটদের জন্য খুব উপকারী এবং স্বাস্থ্যকর খাবার।
  • যারা ওজন কমানোর চেষ্টায় রয়েছেন তারা কিন্তু নির্দ্বিধায় খাবারটি খেতে পারেন খুব তাড়াতাড়ি ওজন কমে যাবে।

ব্রকলি খাওয়ার অপকারিতা

ব্রকলি একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সবজি। এর অপকারিতা তেমন নাই বললেই চলে। তবে কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে যাদের
  • থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে তাদেরকে কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
  • ব্রকলিকে ভালোভাবে গরম পানিতে ফুটিয়ে সিদ্ধ করে তারপর খাবেন।
  • ব্রকলি কেনার সময় অবশ্যই সতেজ শক্ত ও সবুজ গাড় দেখে কিনবেন।

প্রয়োজনীয় কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

ব্রকলির দাম কত
ব্রকলি প্রতিপিস ৮০ টাকা( বাজারদরের উপর নির্ভর করে অনেকটা)
ব্রকলির ছবি

ব্রকলি খাওয়ার অপকারিতা
যাদের থাইরয়েড এর সমস্যা রয়েছে আর একটু কম খাবেন প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

পরিশেষ

শীতকালীন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি সবজি হচ্ছে ব্রকলি। যা বিভিন্ন পুষ্টিগুণের সমৃদ্ধ এবং শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আপনার এই আর্টিকেলটি পরে হয়তো বুঝতে পারছেন ব্রকলি প্রতিদিন খাওয়ার ফলে শরীরে ঠিক কি কি উপকার হয়। এজন্য আপনারা শীতকালে নিয়মিত ব্রকলি খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪